পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু ‘পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ’, বাহারের কী হবে?

পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু ‘পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ’, বাহারের কী হবে?


প্রতিটি মৃত্যুই হৃদয় বিদারক ও মর্মান্তিক। কিন্তু ওমান প্রবাসী বাহার যে মর্মান্তিকতার মুখোমুখি হচ্ছেন তা হয়তো কোনো নির্ণয়ক দিয়ে মাপা সম্ভব নয়। কেননা এক দুর্ঘটনায় বাহার হারিয়েছে প্রিয়তমা স্ত্রী, স্নেহের সন্তান, মমতাময়ী মাসহ পরিবারের সাত সদস্যকে। এক কথায় বলতে গেলে, সব উজার হয়ে গেছে বাহারের। তাই তিনি প্রলাপ করছেন, ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো’।

অপরদিকে শোকে কাতর থেকে পাথর হওয়ার পরও থেকে যাচ্ছে আরেকটি হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার বেদনা। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু যদি হয়, ‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ’ তাহলে বাহার সেই ভার বইবেন কী করে! তাও আবার ওমান থেকে ফিরে প্রথম বারের মতো কন্যা শিশুটিকে এয়ারপোর্টে দেখেছেন। পিতৃ আদরে কন্যাকে কোলে নিয়ে আলিঙ্গন করেছেনও শুধু একবার। 

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকার ওমান প্রবাসী বাহার স্ত্রী, সন্তান, মাসহ সাত স্বজনকে হারিয়ে এখন অনেকটাই পাগল প্রায়। মাটিতে লুটিয়ে বুক চাপড়ে আহাজারি করতে দেখা যায় বাড়ির আঙ্গিনায় বাহারকে। এ সময় তিনি বলছেন, আমার সব কেড়ে নিলো কে?। 

বাড়ির উঠানের পাশেই তার দুই তলা পাকা বিল্ডিং। সুখের খোঁজে পাড়ি জমান ওমানে। টাকা কামিয়েছেন, ঘর করেছেন, পরিবারের এসেছে নতুন একটি মুখ। দুই বছরের মেয়ে মীমকে দেখেছেন প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দরে। কোলে নিয়েছেন একবার তিনি। বাহার বলেন, আমিতো সব হারিয়েছি কী করে বাঁচবো আমি জানি না। 

লক্ষ্মীপুরের প্রবেশ মুখে জমদূত ভর করেছিলো বাহারে মাইক্রোবাসে। অভিযোগ রয়েছে, গাড়ির  চালক এনায়েতুল্লাহ আকবর (২৪) ঘুমাচ্ছন্ন ছিলেন। আচমকা মাইক্রোবাসটি পরে যায় রাস্তার পাশের খালে। দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে চার জনের জীবন রক্ষা পেলেও একই পরিবারের সাত জনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় বাহারের স্ত্রী কবিতা আক্তার (২৪), মেয়ে মীম আক্তার (২), মা মুরশিদা বেগম (৫০), নানী ফয়জুন নেছা (৭০), বড় ভাইয়ের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫) এবং ভাতিজি রেশমি আক্তার (৯) ও লামিয়া আক্তার (৮) মারা যায়। 

ওমান প্রবাসী মো. বাহার উদ্দিন আড়াই বছর পর দেশে ফিরছিলেন। পরিবারের সবার মধ্যে ফেরার আনন্দে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার।’ কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই চুরমার হয়ে গেছে ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায়।  

বুধবার (৬ আগস্ট) বিকাল পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকায় পারিবারিক কবরে তিন শিশুসহ ছয় জনকে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়। গ্রামের বয়োবৃদ্ধ অনেকেই বলেন উত্তর জয়পুর ইউনিয়নে এ ধরনের  মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেনি । এক পরিবারের সাত জন হারানোর ঘটনা দুই ইউনিয়ন চৌপল্লী ও চর মোহাম্মদ নগর গ্রামে শোক জেঁকে বসে আছে। বিকালে কবরের দিকে যখন একে একে মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়, তখন পৃথিবীর সব অশ্রু যেন ঝড়ে পড়ছিলো কাচারিবাড়িতে।


Similar Movies

0 comments: